
কানাডার এক কিশোর সর্বকনিষ্ঠ মহাকাশচারী হতে যাচ্ছেন। ক্যালগারির ১৭ বছর বয়সী ওই কিশোর ইতিমধ্যে মহাশূন্য ভ্রমণের জন্য কয়েক শ আগ্রহী প্রার্থীর সঙ্গে মহাকাশযানে তার আসন সংরক্ষণ করেছেন। ধনকুবের স্যার রিচার্ড ব্রানসনের ভার্জিন গ্যালাকটিক মহাকাশযানে করে মহাশূন্য ভ্রমণের জন্য এ পর্যন্ত ৪৪০ জন তাদের অর্থ পরিশোধ করেছেন। তাঁরা এখন চূড়ান্ত পরীক্ষা ও ভ্রমণের জন্য অপেক্ষা করছেন। কানাডার ওই কিশোর এখনই তার পরিচয় প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না। ভার্জিন গ্যালাকটিকের ভ্রমণ প্রতিনিধি মাইকেল ব্রডহার্স্ট বলেন, যখন অনেক কিশোর-কিশোরী ১৬ বছর হলেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার স্বপ্ন দেখে, তখন ক্যালগারির ওই কিশোর তার স্বপ্নের সীমা দিগন্ত রেখার পানে নিয়ে গেছে। ১৬ বছর বয়সেই সে মহাশূন্য ভ্রমণের জন্য অর্থ পরিশোধ করেছে। তার বয়স এখন ১৭ এবং মহাশূন্য ভ্রমণে যেতে পারবে ১৮ বছর হলেই। এক থেকে দুই বছরের মধ্যে সে তার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারবে। তিনি আরও বলেন, এ মুহূর্তে ভ্রমণকারীদের তালিকায় ১৮ বছরের নিচে কারও নাম নেই; আর ১৮ বছর না হলে ভার্জিন গ্যালাকটিকের যাত্রীও হওয়া যায় না। দ্য স্পেস টুডে ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, রুশ নভচারী সবচেয়ে কম বয়সে কক্ষপথে ভ্রমণ করেন। ১৯৬১ সালের আগস্টে মাত্র ২৫ বছর বয়সে তিনি কক্ষপথে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।
ভার্জিন গ্যালাকটিকের বিক্রয় প্রধান ক্যারোলিন উইনসার জানান, ২৩ জন কানাডিয়ান মহাশূন্য ভ্রমণের জন্য একটি ফ্লাইট রিজার্ভ করেছেন, যার মধ্যে ১৭ জন পুরুষ ও ছয়জন নারী রয়েছেন। প্রত্যেক যাত্রীকে এ জন্য দুই লাখ মার্কিন ডলার প্রদান করতে হবে। কানাডার ভ্রমণেচ্ছুদের মধ্যে রয়েছেন ভার্জিন গ্যালাকটিকের কানাডার ভ্রমণ আয়োজনকারী ভিশন ২০০০ ট্রাভেল গ্রুপের যৌথ-অংশীদার স্টেফানি অ্যানিভিচও। তিন সন্তানের মা ওন্টারিওর ৬৩ বছর বয়সী স্টেফানি বলেন, তাঁর ভাষায়, আমি আর পার্শ্বরেখায় বসে থাকতে চাই না। দুই বছর আগে যখন শূন্য অভিকর্ষ বা মাধ্যকর্ষণ শক্তিতে ওজনহীনতার অভিজ্ঞতা অর্জন করি, তখনই মহাকাশে ভ্রমণের জন্য আমি মনোস্থির করি। এ জন্য ইতিমধ্যে বিশ্বের কয়েকজন মহাকাশে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অর্জনকারীর সঙ্গে দেখাও করেছি। তিনি আরও বলেন, কানাডায় অনেক বাণিজ্য সংগঠক ও ভ্রমণপিয়াসী আছে, যারা জীবনে একবারের জন্য হলেও মহাশূন্যে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিতে ব্যাকুল। অনেক বিত্তশালী মানুষ আছে, যারা অর্থের প্রাচুর্যে যেকোনো কিছু অর্জন করার ক্ষমতা রাখে।
ভয়ে রোলার কোস্টারে না ওঠার কথা জানিয়ে স্টেফানি জানান, তরুণী বয়সে তিনি একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু কখনো ভাবেননি যে একজন মহাকাশচারী হতে পারেন।
ভার্জিন গ্যালাকটিকে কানাডার ভাবি নভোচরের মধ্যে ছয়জন ওন্টারিওর এবং ১০ জন ক্যারগারির নাগরিক রয়েছেন। মাইকেল ব্রডহার্স্ট মনে করেন, কিছু করে দেখার বাসনা আর প্রসিদ্ধ পর্যটন শিল্পের কারণে ক্যালগারির নাগরিকেরা মহাকাশে ভ্রমণের জন্য এতটা আগ্রহী। ক্যালগারির যাত্রীদের মধ্যে একজন তেল ব্যবসায়ী, একজন দন্তচিকিৎসক ও আবাসন ব্যাবসায়ী রয়েছেন। বেশ কয়েকজন একক যাত্রীর সঙ্গে আরও আছেন এক দম্পতিও।
ভার্জিন গ্যালাকটিক মূলত তার মাদারশিপ থেকে পৃথিবী ছাড়িয়ে ১২০ কিলোমিটার দূরে একটি ছোট নভোযান পাঠাবে। ছয় যাত্রী নিয়ে দুজন পাইলট মহাশূন্যে নিয়ে যাবেন ওই যানটিকে, যেখানে যাত্রীরা শূন্য ডিগ্রি অভিকর্ষে নিজেকে সম্পূর্ণ ওজনহীন হওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন। প্রথম মহাকাশযানটি এক বছরের মধ্যে মহাশূন্যে যাত্রার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভার্জিন গ্যালাকটিকের মালিক ব্রানসন কানাডিয়ান গণমাধ্যমকে বলেছেন, আশা করা যায় ১২ মাসের মধ্যে যাত্রার জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। তিনি বলেন, অবশ্যই আমরা ১০০ ভাগ নিরাপদ ভ্রমণের জন্য যা যা করণীয় তা নিশ্চিত করার পরই মহাশূন্যে যাত্রা করব।
তিনি জানান, ভবিষ্যতে মহাশূন্য ভ্রমণের জন্য খরচ আরও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে এই খরচ ৫০ হাজার ডলারে নেমে আসবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সুত্রঃ বাংলা টাইস ..
0 comments:
Post a Comment